সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিসিএস প্রস্তুতি(বাংলা):কবি-সাহিত্যিকদের পরিচিতি:পর্ব-২


লিখেছেন : মো: এরশাদ আলী 
পূর্ববর্তী পর্ব : পর্ব : ১
আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন (১৯৩০-১৯৯৮) জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক জন্ম ১৯৩০ সালের ১ লা জানুয়ারী সিরাজগঞ্জে তার প্রকাশিত বিজ্ঞান, পরিবেশ ও শিক্ষাবিষয়ক বইয়ের সংখ্যা ২৮ উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও মানুষ, এ যুগের বিজ্ঞান, বিপন্ন পরিবেশ, বিজ্হান জিজ্ঞাসা, সাগরের রহস্যপুরী, মেঘ বৃষ্টি রোদ এবং পরিবেশের সংকট ঘনিয়ে আসছে বিজ্ঞান শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমী পুরস্কার, ইউনেস্কোর কলিঙ্গ পুরস্কার এবং কুদরত-ই-খুদা স্বর্ণপদকসহ এক ডজনের অধিক পুরস্কার লাভ করেন তিনি বাংলা একাডেমী প্রকাশিত বিজ্ঞান বিশ্বকোষ-এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ এবং Human Development Foundation-সহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন তিনি ছিলেন Islamic Academy of science-এর প্রতিষ্ঠাতা ফেলো; বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো এবং সভাপতি (১৯৮৮-৯১) এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি (১৯৮৬-৯০), Foundation for Research on Planning and Development-এর সহ-সভাপতি (১৯৯৩),Bangladesh Association for Science Education-এর সভাপতি (১৯৮৮-৯৫), International Council of Associations for Science Education-এর নির্বাহী সদস্য (১৯৮৯-৯৩), এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মনোনীত International Science Council-এর সদস্য ছিলেন আল-মুতী শরফুদ্দিন ১৯৯৮ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির Natoinal Encyclopedia of Bangladesh Project-এর Project Implementation Committee-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
 আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১): কবি, সরকারী কর্মকর্তা ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বরিশাল জেলায় জন্ম তার পূর্ণ নাম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পঞ্চাশ দশকের অন্যতম কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তার কবিতার সূচনা ভাষা আন্দোলন-কে কেন্দ্র করে তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে : সাত নরী হার (১৯৫৫), কখনো রং কখনো সুর (১৯৭০), কমলের চোখ (১৯৭৪), আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি (১৯৮১), সহিষ্ণু প্রতীক্ষা (১৯৮২), বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা (১৯৮৩), আমার সময় (১৯৮৭), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯১), আমার সকল কথা (১৯৯৩), খাচার ভিতর অচিন পাখি, মসৃণ কৃষ্ণগোলাপ (২০০২) এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউন সম্পর্কে Yallow Sands' Hills: China through Chinese Eyes, বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন সর্ম্পকে Rural Develpoment: Problems and Prospects, (Tom Hexner-এর সঙ্গে যৌথভাবে); Creative Development, Food and Faith. কাব্য রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯) লাভ করেছেন তিনি 'পদাবলী' নামে কবিদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন আাবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ২০০১ সালে মার্চে ঢাকায় মৃত্যুররণ করেন
 আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১-১৯৯৮) সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ১৯১১ সালের ১২ মার্চ ঢাকা জেলার গাজীপুরে জন্ম কর্মজীবন শুরু দৈনিক সোলতান পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে এর পাশাপাশি তিনি আজাদ, ইত্তেফাক, পূর্বদেশ ও সংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন পদে চাকরি করেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত 'অল্পদর্শী' ছদ্মনামে দৈনিক সংবাদে 'বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা' শীর্ষক সাপ্তাহিক কলাম লিখে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এর আগে তিনি (১৯৬১-১৯৭২) সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীতে সহকারী অনুবাদকের পদে নিযুক্ত ছিলেন প্রথম জীবনে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পরে ভাসানির ন্যাপের সাথে যুক্ত হন তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট  সোসাইটি, বাংলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো উপন্যাস: পরিত্যক্ত স্বামী (১৯৪৭),ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান (১৯৬৩), পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৭৪), সংকর সংকীর্তন (১৯৮০), দেয়াল (১৯৮৫); গল্পগ্রন্থ জীবন (১৯৪৮), রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা (১৯৭৮), ল্যাংড়ী (১৯৮৪); প্রবন্ধ চিন্তার বিবর্তন পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য (১৯৬৪),  Sociology of Bengal Politics (১৯৭৩), সোচ্চার উচ্চারণ (১৯৭৭), লোকয়িত সমাজ ও বাঙালী সংস্কৃতি (১৯৮৮) ইত্যাদি শিল্পির সাধনা (১৯৬৭) ও পার্ল বাকের সেরা গল্প তার দুটি অনুবাদগ্রন্থ তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৯), একুশে পদক (১৯৮৩), শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহ স্মৃতিপদক (১৯৮৬), মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), এবং মৃত্যুর পর ফিলিপস পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট তার মৃত্যু হয়
 আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬-১৯৮৯) শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকার ও গবেষক জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ মার্চ ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪), যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪) ও আক্রান্ত গজল (১৯৮৮) আবু হেনার তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং আমি সাগরের নীল (১৯৯৫) তার গানের সংকলন শিল্পীর রুপান্তর ও কবিতা  তার দুটি প্রবন্ধ সংকলন আবু হেনা মোস্তফা কামালের ইংরজিতে লেখা গবেষণা গ্রন্থটি হলো The Bengali Press and Literary Writting. এটি উনিশ শতকের কলকাতায় বাংলা সাময়িকপত্রে প্রকাশিত সাহিত্যবিষয়ক রচনা সম্পর্কে গবেষণামূলক আলোচনা
আবু হেনা ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তেপান্ন বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন